#Real_Love♥

#Real_Love
# Oniya_Chowdhury
Part:13
.
.
আমি উপর থেকেই দেখতে পেলাম নিচে সোফায় বসে বসে ইয়াশ চকলেট খাচ্ছে আর ট্যাব হাতে কিছু একটা করছে।হয়তোবা গেইম খেলছে।আমি ইফাজের কাছ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিচে যেয়ে ইয়াশের পাশে গিয়ে বসলাম।ইয়াশ আমাকে দেখেই আমার সাথে হেলান দিয়ে বললো,
- ভাবি,এই গেইমটা পারো খেলতে?
- নাতো!কিভাবে খেলে?
- দাড়াও আমি শিখিয়ে দিচ্ছি!
ইয়াশ সবকিছু শিখিয়ে দিচ্ছিলো কিভাবে গেইমটা খেলতে হয়।আমি ইয়াশের প্রতিটা কথার প্রতিত্তুরে শুধু "ওহ্,আচ্ছা,হুম" বলছিলাম।
.
ইফাজ আমাদের সামনের সোফায় বসে বসে ফোন দেখছে আর আড়চোখে এদিকে তাকাচ্ছে।
.
ইয়াশ গেইম খেলতে খেলতে আস্তে আস্তে আমার কোলে শুয়েই পড়লো।কিছুক্ষণ পর হঠাৎ কি মনে করে যেনো ইয়াশ লাফিয়ে উঠে বললো,
- ওহ্ ভাবি।তোমাকে একটা জিনিস দেখাতে ভুলেই গিয়েছি।তুমি একটু বসো।আমি পাচঁমিনিটের মধ্যেই আসছি।
.
ইয়াশ চলে গেলো দেখে আমিও কিচেনে চলে আসলাম।ওখানে একা থাকা রিস্ক।কিচেনে আন্টি আর একটা কাজের মেয়ে ছিলো।যেই মেয়েটা মেইনডোর খুলে দিয়েছিলো সেই মেয়েটা।অনেক বড় কিচেনটা।কিচেনের ভেতর ঢুকতেই আন্টি বলে উঠলেন,
- আরে হিয়া,তুমি কিচেনে কেনো এসেছো?
- এমনি আন্টি!
আন্টি আমাকে একহাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে বললো,
- রান্না পারো?
- বেশি কিছু পারি না।সামান্য!
- ওহ্!আমিও তেমন পারতাম না!ইফাজের আব্বু যে কি দেখে আমাকে পছন্দ করেছে?এখনও বুঝে উঠতে পারি না।নতুন নতুন যখন ওর জন্য রান্না করতাম,মোটেও ভালো হতো না।তারপরও বলতো"আহ্,কি মজাই না হয়েছে আজকের রান্নাটা!"যেদিন এই কথাটা বলতো ওইদিনই বুঝতাম,একটুও ভালো হয় নি।কথাটা কিন্তু প্রতিদিনই শুনতাম।
.
আন্টির কথা শুনে মুখ চাপিয়েই সামান্য হাসলাম।কিন্তু পেটের মধ্যে বোম ফাটানোর মত হাসি পাচ্ছে।
.
আমি হাসি থামিয়ে আন্টিকে বললাম,
- আন্টি!আংকেল কে তো দেখলাম না।বাসায় নেই?
- কাল ব্যবসার কাজে ঢাকার বাইরে গেছে।তিনদিন পর আসবে।তুমি আজ আসবা,এই কথাটা যখন ওকে বললাম।ও আফসোস করে বললো"ইস!মেয়েটাকে সামনাসামনি দেখার সুযোগই পাচ্ছি না!"সেই ইফাজের ফোনে তোমার একটা ছবি দেখেছিলো।ওইটাই ওর ফার্স্ট এন্ড লাস্ট দেখা।
.
আমি অবাক হয়ে জিঙ্গেস করলাম,
- কোন ছবি আন্টি?
- রেস্টুরেন্টের একটা ছবি!ইফাজের ফোনে এখনও আছে তো।লুকিয়ে লুকিয়ে তুলেছিলো!.....কথাটা বলেই আন্টি হাসলো।তারপর আবার বললো,
- ওকে বললেই দেখাবে।
- আচ্ছা আন্টি! আমি এখনই দেখে আসছি।
.
কথাটা বলেই আমি ওখান থেকে ইফাজের কাছে চলে আসলাম।উনার পাশে বসতেই উনি ভুত দেখার মতো আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,
- মেঘ না চাইতেই জল!......কথাটা বলেই ইফাজ এক হাত বাড়িয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরার আগেই আমি উনার হাত চেপে ধরে বললাম,
- একদম না!আপনার ফোনটা একটু দেওয়া যাবে?
- পারমিশন নেওয়ার কি আছে?আমার সবকিছু তোমার!আমার ফোন তোমার!আমার আমি তোমার!আমার বেড তোমার!আমার ওয়াশরুম তোমার!আমার জামা,কাপড়,শার্ট,প্যান্ট, লুঙ্গি সব,সব তোমার! আমি দিতে না চাইলেও তুমি সব কেড়ে নিবে!
- উফ্!আমি যাস্ট ফোনটা চেয়েছি!ওগুলোর দরকার নেই।
.
ইফাজ ফোনটা এগিয়ে দিয়ে বললো,
- নাও!
.
আমি ফোনটা নিয়েই ফার্স্ট গ্যালারিতে ঢুকলাম।অনেকগুলো ফোল্ডার দেখতে পেলাম।বউ নামের একটা ফোল্ডারে ঢুকে দেখলাম এখানে সব আমার পিক দিয়ে ভর্তি!আমি উনার দিকে তাকালাম!উনি সেন্টার টেবিলের উপর দুইপা তুলে আধশোয়া অবস্থায় সোফায় শুয়ে পেপারওয়েট নিয়ে খেলছিলেন।আমার তাকানো দেখে আমার দিকে তাকিয়ে একটা কিউট হাসি দিয়ে আবার খেলায় মনোযোগ দিলেন।
.
আমি অনেকগুলো পিক দেখতে পেলাম।ওর ফোনে আমার ফার্স্ট পিক দেখার জন্য আমি একদম নিচে নামলাম।কত্ত পিক।সব ক্যান্ডিড পিক,দেখেই বোঝা যাচ্ছে লুকিয়ে লুকিয়ে তোলা।আমি উনার দিকে ফোনটা ধরে বললাম,
- এই পিকগুলো কতদিন আগের?
আমার কথা শুনে উনি নরমালভাবে তাকিয়ে বললেন,
- ডিটেইল'স এ যেয়ে দেখো।
আমি যে রেগে উনাকে জিঙ্গেস করলাম উনি বুঝলেন ই না।আর এভাবে উনার ফোনে আমার পিকগুলো দেখছি সেটা দেখেও কোনো রিয়েক্ট করলেন না।
.
আমি উনার থেকে চোখ ফিরিয়ে আবার পিক দেখতে লাগলাম।লাস্টের দিকে আমার কয়েকটা রেস্টুরেন্টে বসা পিক দেখতে পেলাম।আমি একটা পিক এ ক্লিক করে দেখলাম এই পিকটা অনেকদিন আগের।রেস্টুরেন্টটাতে আমি একবার ই গিয়েছিলাম।আমার ওখানে ওটাই ফার্স্ট যাওয়া ছিলো এন্ড ওটাই লাস্ট।হিজাব পড়া অবস্থায়, একহাত টেবিলের উপর রাখা,অন্যহাতের কনুই রেখে গালে হাত দিয়ে কাজিনদের সাথে হেসে হেসে কথা বলছিলাম,তখনই পিকটা তোলা হয়েছে!
.
হঠাৎ ইয়াশ দৌড়ে এসে আমার দুইহাত দুইদিকে দিয়ে আমার কোলে বসে একটা আর্টখাতা খুলতে খুলতে বললো,
- ভাবি,এই আর্টখাতা ভর্তি তুমি।প্রতিটা পেজ এ আমি নিজে তোমায় একেছি।যখনি তোমাকে টাচ্ করতে ইচ্ছে করে তখন ভাইয়ার ফোন নিয়ে তোমার ছবি দেখে দেখে এখানে আকিঁ।
.
আমি ইয়াশের কথা শুনে অবাক হয়ে উনার দিকে তাকালাম।উনি আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,
- ও এরকম ই!
আমি ইয়াশকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে গালে একটা কিস করে আর্টখাতাটা ওর হাত থেকে নিয়ে দেখতে শুরু করলাম।আমি একটা একটা করে দেখছি আর হাসছি।কারন একটা ছবিও আমার মতো দেখতে হয়নি।কিন্তু আমার প্রতি যে ওর এতো ভালোবাসা সেটা দেখে আমি অবাক হচ্ছি!
.
আমার দেখা শেষে আর্টখাতাটা ইয়াশ রেখে আসতে চলে গেলো।আমি উনার ফোনটা উনাকে দিয়ে দিলাম।উনার কানের কাছে যেয়ে আস্তে করে বললাম,
- আপনি লুঙ্গি পরেন?
- কেনো?
- তখন যে বললেন,আপনার লুঙ্গিও আমার!তার জন্যই জিঙ্গেস করলাম।
.
উনি আধশোয়া থেকে উঠে ঠিকঠাক হয়ে বসে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,
- বলো তো,গরমকালে ছেলেদের জাতীয় পোশাকের নাম কি?
কথাটা শুনেই আমি উনার থেকে চোখ ফিরিয়ে নিলাম।কারন উনি কি মিন করেছে সেটা বুঝতে পেরেছি।
.
ইয়াশ দৌড়ে এসে অন্য সোফা থেকে ফোনটা নিয়ে আমার কোলের সাথে হেলান দিয়ে গেইম খেলছে।
.
- বলো!
উনি আবার জিঙ্গেস করলেন।আমি উনার দিকে তাকিয়ে ইয়াশকে নিয়ে উঠে আসার চেষ্টা করলাম।উনি আমার হাত ধরে বসিয়ে দিয়ে বললেন,
- ভয় পাচ্ছো নাকি?বিলিভ মি,আমার বেডরুমে একটা লুঙ্গিও নেই।ওইটা যাস্ট কথার কথা বলছিলাম।গরমের সময় তো রুমে এসি চলে।তাই লুঙ্গিরও দরকার হয় না।
- লুঙ্গি দেখে ভয় পাওয়ার কি আছে?
- গুড!
উনার "গুড" বলা শুনে উনার দিকে তাকিয়ে বললাম,
- গুড বলার কি হলো এখানে?
- তুমি ভয় পাচ্ছো না দেখে বললাম আরকি!সাহসী বউ আমার!
কথাটা উনি হেসে হেসে বললেন।উফ্!উনার হাসি দেখে আমার গা জ্বলে যাচ্ছে!কেনো যে লুঙ্গির ব্যাপারটা উঠাতে গেলাম?
উনি আবার বলতে শুরু করলেন,
- তোমার শ্বশুরআব্বা কিন্তু লুঙ্গি পরতে ভীষণ ভালোবাসে।তার রুমে লুঙ্গির স্তুপ!বলতে গেলে সবখানে লুঙ্গি ঝোলে!আমিতো একদিন লুকিয়ে লুকিয়ে একটা লুঙ্গি পরেছিলাম!ভয়ে বেশি হাটাহাটি করি নি।বেডের উপর চুপচাপ বসে ছিলাম।
.
কথাগুলো বলেই উনি হো হো করে হেসে উঠলেন!
উনার কথা শুনে আমি অন্যদিকে তাকিয়ে হেসে আবার মুখে রাগী ভাব নিয়ে উনার দিকে তাকালাম।
.
হঠাৎ ইয়াশ আমার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো,
- আমিও পরেছিলাম ভাইয়ার দেখাদেখি!ভাইয়া আর আমি অনেক্ষণ লুঙ্গি ডান্সে নেচেও ছিলাম।ওইটার একটা ভিডিও আছে ভাইয়ার লেপটপে।গেইম টা শেষ করি,তারপর তোমাকে নিয়ে দেখবো।
.
আমি উনার দিকে হা করে তাকিয়ে আছি।উনি হাসছেন!এদের দুইভাইয়ের লুঙ্গির ইতিহাস শুনে আমি হাসবো না কাদবো বুঝে উঠতে পারছি না।হঠাৎ মনে পরলো একটু আগে বলা উনার কথাটা।আমি উনার দিকে তাকিয়ে বললাম,
- আপনি যে বললেন,আপনি নাকি লুঙ্গি পরে চুপচাপ বসে ছিলেন?
আমার কথা শুনে উনি আমার সাথে হেলান দিয়ে বললেন,
- বউকে বলতে লজ্জা করে তো!তাই ইনোসেন্ট সাজলাম!
.
.
(চলবে)

Comments

Popular posts from this blog

পুলিশ বউয়ের রোমান্টিক অত্যাচার

#জুনিয়র_বর

Life💜Partner লাইফ💜 পার্টনার ।